প্রাণ ফিরছে পাহাড়ে।বাড়ছে পর্যটক। দূর-দূরান্ত পর্যটকদের আগমনে এখন মুখর রাঙামাটি। করোনা ভাইরাসের দখল যেন কাটতে শুরু করেছে পাহাড়ে। তাই এখন অনেকটা সচল রাঙামাটির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র।
সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটিতে আবারও লোকে লোক অরণ্যে ভরপুর থাকছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ, পর্যটন ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝর্ণা, ও ঘাগড়া করা বাগান ঝর্ণা। কারণ রাঙামাটিতে রয়েছে এলামেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়।
যেদিকে চোখ যায় স্বচ্ছ পানি আর বিস্তীর্ণ সবুজের হাতছানি। দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত সবুজের সমারোহ। এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি। যেন শৈল্পিক আঁকা দৃশ্য। আঁকাবাঁকা কাপ্তাই লেক। চারদিকেই স্বচ্ছ জলধারা।
কাপ্তাই লেক মিশেছে প্রকৃতির সঙ্গে অপরূপ সাজে। দেখলে মনে হয় যেন কোনো এক শিল্পী তার তুলিতে এঁকেছেন জীবন্ত এক চোখ জুড়ানো ছবি। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য পাহাড়ি ঝর্ণার কলতান আরও আকর্ষণীয় করেছে এ জেলাকে।
তাই যান্ত্রীক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে রাঙামাটির সবুজ পাহাড়ের ছুটে আসেন প্রকৃতি প্রেমী মানুষগুলো। কিন্তু চলতি বছরের প্রায় ৭ মাস করোনা ভাইরাসের কারণে একে বারে নিস্তব্ধ ছিল এ রাঙামাটির পাহাড়গুলো। আসেনি কোনো পর্যটক।
তবে এখন আবারও সব আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে। আসছে পর্যটক। বাড়ছে ভিড়। প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। শুক্র ও শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের পদচারণায় কোলাহল বাড়ছে পর্যটন স্পটগুলোতে। প্রকৃতি প্রেমীদের প্রতিনিয়তই যেন কাছে টানছে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলধারা।
রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, ঈদের ছুটি থেকেই রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভির জমছে। এখন আগের মতো অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে পর্যটন মোটেল ও কটেজগুলো। অগ্রিম বুকিংও থাকছে আবাসিক হোটেল, কটেজ ও রেস্ট হাইজগুরো। এতে আসতে আসতে রাজস্ব আয় বেড়েছে পর্যটন খাতে।
অন্যদিকে, টানা লকডাউনের পর কিছুটা স্বস্তি ফিরছে পাহাড়ি মানুষগুলোর মধ্যে। করোনার ভয় কাটছে সবার মধ্যে। তাই রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দূর-দূরান্তের পর্যটকরাই নন- স্থানীয়রাও ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটে চলেছেন। হারিয়ে যাচ্ছেন চোখ জুড়ানো প্রকৃতির সৌন্দর্যের আধারে।
এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা থেকে আগত পর্যটক জেসমিন জামানের সাথে। তিনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ জীবন কাটাতে হয়েছে। অনেকটা নিঃশ্বাস নেওয়াও মুশকিল ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে এখন পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন থেকে পরিবার নিয়ে পাহাড়ে ছুটে এসেছি। একটু স্বস্তির আশায়। প্রকৃতিতে অন্যরকম শান্তি অনুভব হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। এর উত্তরে খাগড়াছড়ি জেলা,
দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য আর পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা। জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি কন্যা কর্ণফুলী নদী। মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। যার উৎপত্তি স্থল ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড়। কর্ণফুলী থেকে উৎপত্তি হয়েছে চেঙ্গী, মাইনি, কাচালং, সুবলং, রাইংখিয়ং, বরকল, হরিণা।
এসব নদী মিলিয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদে। চারদিকে লেক পরিবেষ্টিত রাঙামাটি জেলা গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমন্বয়ে। পাহাড়গুলো সবুজ বনবাঁদারে ঘেরা। পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলধারা মিলে সৃষ্টি হয়েছে রাঙামাটির নৈসর্গিক আবেশ। যার টানে এখানে ছুটে আসে হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক।
পর্যটকদের সুবিধাতে স্থানীয় উদোগক্তরা এখানে গড়েছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। সেগুলো হচ্ছে- দৃষ্টিকাড়া ঝুলন্ত ব্রিজ,
কটেজ ও মোটেল। কাপ্তাই লেকে নৌভ্রমণের জন্য রয়েছে স্পীডবোট, প্যাডলবোট ও ইঞ্জিনবোটের সুবিধা। ভাড়াও সুলভ।
শহর থেকে চার কিলোমিটার পূর্বে বালুখালীতে গড়ে উঠেছে সরকারি কৃষি বিভাগের কৃষিফার্ম, বেসরকারি পর্যটন স্পট টুকটুক ইকোভিলেজ, পেদাটিংটিং ও চাংপাং রেষ্টুরেন্ট। প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার নদীপথের দূরত্বে জেলার বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নে অবস্থিত মনোরম সুবলং ঝর্ণাস্পট।
শহরের উত্তরে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাটে স্থাপিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ। আর এসব স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশও।
অন্যদিকে পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণী পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। যা করোনা ভাইরাসের জন্য পর্যটকদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু প্রহেলা সেপ্টম্বর থেকে সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
জানিয়েছেন, রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান হাবিব জিতু। তিনি বলেন, করোনার কারণে সাজেকে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আগামী সেপ্টম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাজেক ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সিন্ধান্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক রিজোর্ট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সাজেক পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার হবে।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, শিগগরিই খুলছে সাজে ভ্যালি। তাই এরই মধ্যে পর্যটক প্রবেশের জন্য সব ধরনের প্রস্তুুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রবেশ করা হবে পর্যটকদের তার জন্য বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জীবাণুনাশক ওষুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাথে পর্যকটদের মাধ্যমে সাজেকে কেই করোনা সংক্রমণে শিকার না হয়।